চিরতরে মেছতা দূর করার উপায়-মেছতা দূর করার ক্রিমের নাম

চিরতরে মেছতা দূর করার বিভিন্ন উপায় রয়েছে। মেছতা হল ত্বকের এক ধরনের সমস্যা, যা সাধারণত সূর্যের আলো, হরমোনের পরিবর্তন এবং বয়স বৃদ্ধির ফলে হতে পারে। মেছতা দূর করার জন্য বিভিন্ন উপায় রয়েছে যা ঘরোয়াভাবে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে করা যেতে পারে। 


চিরতরে মেছতা দূর করার উপায়-মেছতা দূর করার ক্রিমের নাম

এই আলোচনায় আমরা চিরতরে মেছতা দূর করার উপায় সহ মেছতা দূর করার ক্রিম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এর সাথে আরো কিছু কার্যকর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।  

পোষ্টের সূচিপত্র

চিরতরে মেছতা দূর করার উপায় 

মেছতা হল ত্বকের একটি সাধারণ কিন্তু বিরক্তকর সমস্যা, যা মুখের সৌন্দর্যকে নষ্ট করতে পারে। এটি মুখের ত্বকে গাঢ় দাগ বা কালচে ছোপ হিসেবে দেখা দেয় যা মূলত মেলানিনের অতিরিক্ত উৎপাদনের ফল। মেলালিন হলো ত্বকের রং নিয়ন্ত্রণকারী একটি প্রাকৃতিক পিগমেন্ট যা ত্বককে রোদ এবং অন্যান্য পরিবেশগত ক্ষতিকর উপাদান থেকে রক্ষা করে। তবে মেলানিনের অসম উৎপাদন এবং সঞ্চিত হওয়ার ফলে ত্বকে মেছতার সৃষ্টি হয়। সূর্যের আলো, হরমোনের পরিবর্তন, মানসিক চাপ এবং কিছু ওষুধ মেছতা তৈরির অন্যতম কারণ। নিচে চিরতরে মেছতা দূর করার কিছু উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে: 

  1. অ্যালোভেরা জেল: অ্যালোভেরা ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী একটি প্রাকৃতিক উপাদান। অ্যালোভেরা জেলে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান, যা ত্বকের মেছতা দূর করতে সহায়ক। প্রতিদিন রাতে ত্বকে অ্যালোভেরা জেল লাগিয়ে রাখুন এবং সকলে ধুয়ে ফেলুন।
  2. লেবুর রস: লেবুতে থাকা সাইট্রিক এসিড ত্বকের দাগ দূর করতে সহায়ক। এটি ত্বকের মেছতার দাগ হালকা করতে সাহায্য করে। তাজা লেবুর রস তুলার সাহায্যে মেছতার উপর লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। তবে সরাসরি সূর্যের আলোতে যাবার আগে লেবু ব্যবহার করে এড়িয়ে চলুন।
  3. মধু ও দুধের মাস্ক: মধুতে আছে প্রাকৃতিক অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান, যা ত্বকের মেছতা দূর করতে সহায়ক। মধু এবং কাঁচা দুধ মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন এবং মুখে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বককে উজ্জ্বল করে তুলে এবং মেছতার পরিমাণ কমায়।
  4. সানস্ক্রিন ব্যবহার: সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি (UV rays) মেছতার প্রধান কারণ। তাই প্রতিদিন বাইরে বের হওয়ার আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সানস্ক্রিন SPF 30 বা তার বেশি হওয়া উচিত এবং ত্বকের ধরনের উপর ভিত্তি করে নির্বাচিত হওয়া উচিত। সানস্ক্রিন ত্বককে UV-A এবং UV-B রশ্মি থেকে রক্ষা করে যা মেছতার পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। 
  5. ভিটামিন সি সিরাম: ভিটামিন সি ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং ত্বকের মেছতা দূর করতে সহায়ক। ভিটামিন সি সিরাম ত্বকে ব্যবহার করলে মেছতা কমে যায় এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।
  6. টমেটো ও লেবুর মাস্ক: টমেটোতে হাইকোপিন থাকে যা ত্বকের মেছতা কমাতে সহায়ক। একটি টমেটো ব্লেন্ড করে এর মধ্যে কয়েক ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে ত্বকে লাগান। এটি ১৫ মিনিট রেখে তারপর ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের মেলানিন উৎপাদন কমাতে সাহায্য করে এবং মেছতা হালকা করে। 
  7. আলুর রস: আলুতে রয়েছে এনজাইম এবং ভিটামিন সি, যা ত্বকের মেছতা দূর করতে কার্যকর। একটি কাঁচা আলু কেটে তার রস মেছতার দাগের উপর লাগান। ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের কালো দাগ হালকা করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল রাখে।
  8. হলুদের পেস্ট: হলুদ একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান হিসেবে পরিচিত। হলুদ গুড়ো এবং দুধ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন এবং মেছতার উপর লাগিয়ে রাখুন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের মেলানিন উৎপাদন কমাতে সাহায্য করে। 
  9. অমন্ড তেল (Almond Oil)ও মধু: অমন্ড তেলে ভিটামিন ই থাকে যা ত্বকের পুণর্গঠন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। অমন্ড তেল এবং মধু মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন এবং ত্বকের মেছতার উপর লাগান। এটি ত্বকের মেছতা হালকা করে এবং ত্বককে নরম ও মসৃণ করে।
  10. গ্লাইকোলিক অ্যাসিড পিলিং: গ্লাইকোলিক অ্যাসিড একটি প্রাকৃতিক অ্যাসিড যা ত্বকের উপরের স্তরকে এক্সফোলিয়েট করে এবং মেছতা হালকা করতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের মৃত কোষ দূর করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল ও মসৃণ করে তোলে।
  11. কেমিক্যাল পিলিং: কেমিক্যাল পিলিং হলো একটি ডার্মাটোলজিক্যাল পদ্ধতি যা ত্বকের উপরের স্তরকে অপসারণ করে এবং নতুন ত্বকের কোষ তৈরি করতে সাহায্য করে। এই পদ্ধতিতে মেছতা কমানোর জন্য বিশেষ ধরনের অ্যাসিড ব্যবহার করা হয় যেমন ট্রাইক্লোরোঅ্যাসিটিক অ্যাসিড (TCA) বাল ল্যাকটিভ অ্যাসিড।
  12. মাইক্রোনিডলিং থেরাপি: মাইক্রোনিডলিং হলো এমন একটি পদ্ধতি যেখানে ত্বকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সূচ দিয়ে ক্ষুদ্র আঘাত তৈরি করা হয়। এটি ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বাড়িয়ে মেছতি কমাতে সাহায্য করে এবং ত্বককে মসৃণ ও সজীব করে তোলে।
  13. লেজার থেরাপি: লেজার থেরাপি হল মেছতা দূর করার একটি আধুনিক পদ্ধতি। এতে লেজার রশ্মির মাধ্যমে মেছতার দাগের উপর কাজ করে ত্বকের রং সমান করা হয়। এটি ত্বকের গভীরে কাজ করে এবং মেছতার পরিমাণ কমায়।
  14. পেঁপের মাস্ক: পেঁপেতে পাপাইন নামক একটি এনজাইম থাকে, যা ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে সহায়ক। পেঁপে ব্লেন্ড করে ত্বকে লাগান এবং ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের মেছতা হালকা করতে সাহায্য করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
  15. শসার রস: শসা রস ত্বকের মেছতা দূর করতে সাহায্য করে। শসার রসে আছে প্রাকৃতিক ব্লিচিং প্রোপার্টি, যা ত্বকের কালো দাগ হালকা করে। শসার রস তুলোর সাহায্যে ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বককে সতেজ ও উজ্জ্বল রাখে।
  16. নারিকেল তেল: নারিকেল তেল ত্বকের ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে এবং ত্বকের মেছতা হালকা করতে সহায়ক। প্রতিদিন রাতে ত্বকে নারিকেল তেল লাগিয়ে ঘুমান এবং সকালে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের মেলানিন উৎপাদন কমিয়ে ত্বককে উজ্জ্বল করে।
  17. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: মেছতা দূর করার জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার ত্বকের মেছতা কমাতে সহায়ক। এছাড়া পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত যাতে ত্বক হাইড্রেটেড থাকে।

চিরতরে মেছতা দূর করার জন্য উপরোক্ত উপায় গুলো বেশ কার্যকর। তবে ত্বকের ধরন এবং মেছতার স্তর অনুযায়ী পদ্ধতি গ্রহণ করা উচিত। প্রয়োজনে একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত যাতে সঠিক উপায় বেছে নেওয়া যায়। ত্বকের যত্নের নিয়মিত উপরোক্ত উপায়গুলো অনুসরণ করলে চিরতরে মেছতা দূর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ হয়।  

চিরতরে মেছতা দূর করার উপায়-মেছতা দূর করার ক্রিমের নাম

মেছতা দূর করার ক্রিমের নাম 

মেছতা দূর করার জন্য বাংলাদেশের বাজারে বিভিন্ন ধরনের ক্রিম পাওয়া যায়। এগুলো ত্বকের গাঢ় দাগ, পিগমেন্টেশন এবং মেছতা দূর করতে সহায়। কিছু পরিচিত ব্র্যান্ড এবং তাদের পণ্য গুলির নাম নিচে দেওয়া হল:

  1. Meladrem: এই ক্রিমটি মেছতা, হাইপার পিগমেন্টেশন, এবং বয়সের দাগ কমাতে কার্যকর। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং মেলানিন উৎপাদন কমায়। 
  2. Hydroquinone cream (2%-4%): হাইড্রোকুইনোন একটি শক্তিশালী স্কিন ব্রাইটিং এজেন্ট হিসেবে পরিচিত। এটি মেছতা এবং অন্যান্য গাঢ় দাগ হালকা করতে কার্যকর। তবে এটি ব্যবহারের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
  3. kojic Acid cream: ত্বকের দাগ এবং মেছতা দূর করতে kojic Acid একটি জনপ্রিয় ক্রিম। কোজিক অ্যাসিড নামে এটি একটি উপাদান ব্যবহার করে যা ত্বকের মেলানিনের উৎপাদন কমানোর কাজ করে।
  4. Retinold Cream: রেটিনয়েড ক্রিম ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার জন্য ব্যবহৃত একটি কার্যকরী চিকিৎসা। রেটিনয়েড হলো ভিটামিন এ এর একটি রোগ যা ত্বকের কোষ পুনর্গঠন, মেছতা কমানো এবং ত্বকের টেক্সচার উন্নত করতে সহায়ক। 
  5. Tretinoin: এটি একটি জনপ্রিয় রেটিনয়েড যা ত্বকের সমস্যাগুলো বিশেষ করে মেছতা এবং বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে। 
  6. Fair & lovely advanced multi vitamin: এই ক্রিমটি ত্বকের গাঢ় দাগ কমাতে এবং উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক। এটি ত্বককে হালকা করে এবং মেছতা দূর করতে সাহায্য করে।
  7. DermaVive Advanced Melasma Cream : এটি বিশেষভাবে মেছতার জন্য তৈরি করা হয়েছে। এই ক্রিমটি ত্বকের রঙ সমান করতে এবং মেছতার দাগ কমাতে সাহায্য করে।
  8. Alite XL white: এই ক্রিমটি ত্বকের গাঢ় দাগ এবং মেছতা দূর করতে সাহায্য করে। এটি ত্বককে উজ্জ্বল করে এবং ত্বকের টোন সমান করতে সহায়ক।
  9. Melanex Cream: Melanex ক্রিম হাইপার পিগমেন্টেশন এবং মেছতা দূর করতে ব্যবহৃত হয়। এটি ত্বকের মেলানিন উৎপাদন কমিয়ে ত্বকের রঙ সমান করতে সহায়ক।
  10. Pond's white beauty: পন্ডস এর এই ক্রিমটি ত্বকের মেছতা হালকা করতে এবং উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের দাগ এবং পিগমেন্টেশন কমাতে কার্যকর। 
  11. Olay Regenerist: ওলেয় রেজিনারিস্ট সিরিজের ক্রিম গুলো ত্বকে পিগমেন্টেশন কমাতে সহায়ক। এগুলো ত্বকের বয়সের দাগ ও মেছতা হালকা করে। 
  12. Biotique Bio coconut: এই ক্রিমটি প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি এবং এটি ত্বকের কালো দাগ ও মেছতা দূর করতে সাহায্য করে। 
  13. L'Oreal Paris white perfect: লরিয়ালের এই ক্রিমটি ত্বকের মেছতা ও পিগমেন্টেশন কমাতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের রঙ সমান করে ও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
  14. Garnier light complete: এই ক্রিমটি ত্বকের দাগ এবং মেছতা কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। এটি ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধি করে এবং ত্বককে হালকা করে।
  15. Neutrogena rapid tone repair dark spot corrector: নিউট্র্রোজিনা ব্র্যান্ডের এই ক্রিমটি মেছতা এবং গাঢ় দাগ দূর করার জন্য কার্যকর। গ্লাইকোলিক অ্যাসিড, কোজিক অ্যাসিড এবং এল-অ্যাসকরবিক অ্যাসিড এর কার্যকর উপাদান। 
  16. Azelaic acid cream: অ্যাজেলাইক অ্যাসিড একটি প্রাকৃতিক স্কিন লাইটিং উপাদান যা মেছতা এবং ত্বকের অন্যান্য দাগ দূর করতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের ব্রণ ও রোযাসিয়ার চিকিৎসা কিভাবে ব্যবহৃত হয়। 

আরো পড়ুনঃ ১৫ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর প্রাকৃতিক উপায়

মেছতা দূর করার ক্রিম ব্যবহার করার আগে ত্বকের ধরন এবং সমস্যা অনুযায়ী ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নেয়া গুরুত্বপূর্ণ। সব ধরনের ত্বকে সব ক্রিম কার্যকর নাও হতে পারে। তাই ত্বকের পরিচর্যায় সঠিক ক্রিম বেছে নেওয়া সর্বোত্তম পন্থা। 

মেছতা হওয়ার সম্ভাব্য কারণ সমূহ

মেছতা বা হাইপার পিগমেন্টেশন হলো ত্বকের একটি সাধারণ সমস্যা যেখানে ত্বকের কিছু অংশ গাঢ় হয়ে যায়। মেছতা সাধারণত বিভিন্ন কারণে হতে পারে। নিচে মেছতা হওয়ার সম্ভাব্য কারণগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে: 

  1. সূর্যের অতিরঞ্জিত এক্সপোজার: সূর্যের অতিরিক্ত আলো ত্বকে মেলানিন উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়, যা ত্বকের গাঢ় দাগ সৃষ্টি করে। বিশেষ করে  UV রশ্মির প্রভাবে ত্বকে মেছতা হতে পারে।
  2. হরমোনাল পরিবর্তন: গর্ভাবস্থা, পিল ব্যবহারের সময় অথবা হরমোনাল সমস্যা মেছতার সৃষ্টি করতে পারে। প্রেগনেন্সি ম্যাস্ক বা মেলাসমা হরমোনের পরিবর্তনের কারণ হতে পারে। 
  3. বয়সজনিত পরিবর্তন: বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বকের মেলানিন উৎপাদন প্রক্রিয়া পরিবর্তিত হতে পারে, যার ফলে মেছতার মত দাগ সৃষ্টি হতে পারে।
  4. জেনেটিক্স: মেছতার কিছু ধরন পরিবারের মধ্যে চলে আসতে পারে। যদি আপনার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কেউ মেছতাতে ভোগে তাহলে আপনার মধ্যে এই সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  5. ত্বকের আঘাত বা চোট: তোকে কোন ধরনের আঘাত, কাটা বা ইনফেকশন হলে পরবর্তীতে ওই স্থানে মেছতার দাগ তৈরি হতে পারে। এটিকে পস্ট-ইনফ্লামেটরি পিগমেন্টেশন বলা হয়।
  6. ত্বক বা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত রোগ: যেমন পিটিরিয়াসিস ভারসিকলর, অ্যাডিসন ডিজিজ বাল লিভার রোগ ত্বকে পিগমেন্টেশন পরিবর্তন ঘটাতে পারে। এগুলো ত্বকের রঙ পরিবর্তন করে মেছতার মতো দাগ সৃষ্টি করতে পারে।
  7. মেডিকেল চিকিৎসা বা কসমেটিক পদ্ধতি: কিছু কসমেটিক বা মেডিকেল চিকিৎসা যেমন লেজার ট্রিটমেন্ট, বিউটিফিকেশন পদ্ধতি বা ফেসিয়াল স্ক্রাব ব্যবহারের পর ত্বকে মেছতা দেখা দিতে পারে।
  8. পুষ্টির অভাব: ভিটামিন সি, ভিটামিন এ এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের অভাবের ত্বকের স্বাস্থ্য কে প্রভাবিত করতে পারে, এবং ত্বকের মেছতার সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
  9. স্ট্রেস ও মানসিক চাপ: স্ট্রেস ও মানসিক চাপ ত্বকের স্বাস্থ্য কে প্রভাবিত করতে পারে, যা ত্বকের মেছতার সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। স্ট্রেস হরমোনাল পরিবর্তনের মাধ্যমে ত্বকে পিগমেন্টেশন ঘটাতে পারে। 
  10. অলস ও অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা: অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা যেমন অতিরিক্ত তেল ও মিষ্টি খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া এবং নিয়মিত ত্বক পরিচর্যা না করা ত্বকের সমস্যাগুলোকে exacerbate করতে পারে।

মেছতার কারণ সমূহ বিভিন্ন হতে পারে এবং সাধারণত একাধিক কারণ মিলিতভাবে কাজ করে। মেছতার সমস্যা নির্ধারণ করতে এবং এর জন্য কার্যকরী সমাধান পেতে একজন ডার্মটোলজিস্ট এর পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলো যেমন সানস্ক্রিন ব্যবহার সঠিক, পুষ্টি গ্রহণ এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারা মেছতা কমাতে সহায়ক হতে পারে।

এলোভেরা দিয়ে মেছতা দূর করার উপায় 

এলোভেরা ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী একটি প্রাকৃতিক উপাদান। এর অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য ত্বকের মেছতা দূর করতে সহায়ক। এলোভেরার গুনাগুনের কারণে এটি ত্বকের মেলানিন উৎপাদন কমাতে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে। নিচে এলোভেরা দিয়ে মেছতা দূর করার কয়েকটি পদ্ধতি তুলে ধরা হয়েছে:

১.এলোভেরা জেল সরাসরি ত্বকে প্রয়োগ 

এলোভেরা পাতা থেকে তাজা জেল সংগ্রহ করুন। এই জেলটি মেছতার স্থানে সরাসরি প্রয়োগ করুন এবং হালকা করে ম্যাসাজ করুন। ২০ থেকে ৩০ মিনিট রেখে দিন তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে মেছতার দাগ ধীরে ধীরে হালকা হয়ে আসবে। 

২.এলোভেরা এবং লেবুর রসের মিশ্রণ 

এলোভেরা জেলের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এই মিশ্রণটি মেছতার দাগের উপর লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে দিন। লেবুতে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড ত্বকের কালো দাগ হালকা করতে সাহায্য করে। সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার এই পদ্ধতি ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে।

৩.এলোভেরা এবং মধুর মাস্ক

এলোভেরা জেল এবং মধু মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। মধু একটি প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। এই মাস্কটি ত্বকে প্রয়োগ করুন এবং ১৫ থেকে ২০ মিনিট পরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের মেছতা হালকা করে এবং ত্বকে নরম ও মসৃণ রাখে।

৪.এলোভেরা এবং গোলাপ জলের মিশ্রণ 

এলোভেরা জেলের সাথে গোলাপজল মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন। এই মিশ্রণটি ত্বকের মেছতার দাগের উপরে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে দিন। গোলাপজল ত্বকের টোন সমান করে এবং এটি ত্বকের মেছতা কমাতে সাহায্য করে। 

৫.এলোভেরা এবং হলুদের পেস্ট

এলোভেরা জেল এর সাথে হলুদের গুঁড়ো মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। হলুদ একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান যা ত্বকের মেছতা কমাতে সহায়ক। এই পেস্টটি ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে দিন, তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার এই পদ্ধতি ব্যবহার করলে ত্বকের মেছতা হালকা হয়ে আসবে। 

চিরতরে মেছতা দূর করার উপায়-মেছতা দূর করার ক্রিমের নাম

এলোভেরা একটি শক্তিশালী প্রাকৃতিক উপাদান যা ত্বকের মেছতা দূর করতে কার্যকর। নিয়মিত এলোভেরা ব্যবহার করলে ত্বকের মেছতা ধীরে ধীরে হালকা হয়ে আসবে এবং ত্বক হবে উজ্জ্বল ও মসৃণ। এই উপায়গুলো দীর্ঘমেয়াদি এবং নিরাপদ সমাধান প্রদান করতে পারে।

মেয়েদের মেছতা দূর করার উপায় 

মেছতা বা হাইপার পিগমেন্টেশন যা ত্বকের গাঢ় দাগ হিসেবে পরিচিত, মেয়েদের মধ্যে একটি সাধারণ সমস্যা। এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে যেমন সূর্যের অতিরিক্ত এক্সপোজার, হরমোনাল পরিবর্তন বা ত্বকের অন্যান্য সমস্যা। মেয়েদের মেছতা দূর করার জন্য বেশ কিছু কার্যকর উপায় রয়েছে, যা প্রাকৃতিক এবং কেমিক্যাল ভিত্তিক পদ্ধতিতে বিভক্ত। নিচে আলোচনা করা হলো: 

  1. সানস্ক্রিন ব্যবহার: মেছতা প্রতিরোধে সানস্ক্রিন ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি সূর্যের UV রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে এবং মেছতা বাড়ার‌ ঝুঁকি কমায়।SPF 30 বা তার বেশি ব্যবহার করুন এবং প্রতি দুই ঘন্টায় পুনরায় প্রয়োগ করুন। 
  2. এলোভেরা জেল: এলোভেরা জেল ত্বকের মেছতা দূর করতে কার্যকর। এটি ত্বকের সেল রিজনারেশন প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে এবং ত্বকের পিগমেন্টেশন কমায়। প্রতিদিন রাতে এলোভেরা জেল প্রয়োগ করে সকালে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। 
  3. লেবুর রস: লেবুর রস প্রাকৃতিক ব্লিচিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। এটি মেছতা হালকা করতে সাহায্য করে। তবে লেবুর রস ব্যবহারের পর সূর্যের আলোতে যাওয়া উচিত নয়, কারণ এটি ত্বককে আরো সংবেদনশীল করতে পারে। 
  4. হাইড্রোকুইনোন ক্রিম: হাইড্রোকুইনোন ত্বকের পিগমেন্টেশন কমাতে কার্যকর। এটি বাজারের বিভিন্ন পণ্য হিসেবে পাওয়া যায় এবং যার ডার্মাটোলজিস্ট এর পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহৃত হলে ভালো ফলাফল প্রদান করতে পারে।
  5. আজেলাইক অ্যাসিড: আজেলাইক অ্যাসিড পকেট পিগমেন্টেশন কমাতে সহায়ক। এটি ত্বকের গাঢ় দাগ হালকা করে এবং ত্বকের টেক্সচার উন্নত করে। এটি বিশেষ করে ব্রণ জনিত দাগের জন্য কার্যকরী।
  6. ভিটামিন সি সিরাম: ভিটামিন সি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বকের মেছতা দূর করতে সহায়ক। এটি ত্বকের মেলানিন উৎপাদন কমায় এবং ত্বককে উজ্জ্বল করে। 
  7. গ্লাইকোলিক অ্যাসিড: গ্লাইকোলিক অ্যাসিড একটি এক্সফোলিয়েটিং এজেন্ট যা ত্বকের মৃত কোষ দূর করে এবং ত্বকের রঙ সমান করে। এটি ত্বকের দাগ হালকা করতে সাহায্য করে। 
  8. হলুদের পেস্ট: হলুদ একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান। এটি মেছতা হালকা করতে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক। হলুদের পেস্ট সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার ব্যবহার করুন।
  9. প্রাকৃতিক তেল (জোজোবা তেল/ অমন্ড তেল): জোজোবা তেল এবং অমন্ড তেল ত্বকের পিগমেন্টেশন কমাতে সহায়ক। এটি ত্বকের মশ্চারাইজার করে এবং ত্বকের দাগ হালকা করতে সাহায্য করে।  

আরো পড়ুনঃ মহিলাদের চুল পড়া বন্ধে এলোভেরার ব্যবহার

মেছতা দূর করার জন্য প্রাকৃতিক এবং কেমিক্যাল ভিত্তিক পদ্ধতি গুলির মধ্যে বিভিন্ন বিকল্প রয়েছে। প্রতিটি পদ্ধতি ব্যবহারের আগে ত্বকের ধরুন এবং সমস্যা অনুযায়ী পণ্যটি পরীক্ষা করা উচিত এবং সম্ভব হলে ডার্মাটোলজিস্ট এর পরামর্শ নেয়া উচিত। নিয়মিত যত্ন ও সতর্কতা মেছতা দূর করতে এবং ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নতি করতে সাহায্য করে। 

পুরুষের মেছতা দূর করার ক্রিম 

পুরুষের মেছতা বা হাইপার পিগমেন্টেশন দূর করার জন্য বিভিন্ন কার্যকরী ক্রিম বাজারে পাওয়া যায়। এই ক্রিম গুলো ত্বকের পিগমেন্টেশন কমাতে, ত্বকের টোন সমান করতে এবং তোকে উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে। নিচে পুরুষের জন্য কিছু জনপ্রিয় এবং কার্যকরী ক্রিমের তালিকা দেয়া হয়েছে: 

  • Kiehl's clearly Corrective dark spot solution 
  • Murad rapid Age spot and pigment lightening serum 
  • Olay Regenerist Luminous tone perfecting cream 
  • Neutrogena rapid tone repair dark spot corrector 
  • SkinCeuticals Discoloration Defense 
  • Obagi Nu-Derm clear Fx
  • L'Oreal Paris Revitalift Bright Reveal Brightening Peel Pads
  • The ordinary alpha Arbutin 2%+ HA
  • Jack Black Intense therapy lip balm SPF 25
  • Eucerin advanced brightening spot corrector 

পুরুষের মেছতা দূর করার ক্রিম বেছে নেয়ার সময় ত্বকের ধরন এবং সমস্যার প্রতি নজর দেওয়া উচিত। বিভিন্ন ক্রিমের কার্যকারিতা ত্বকের পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে, তাই ত্বকের যত্নে সঠিক পণ্য বেছে নেয়ার জন্য ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নেয়া উচিত। নিয়মিত ব্যবহারের মাধ্যমে এবং সঠিক ত্বক পরিচর্যার মাধ্যমে পুরুষের মেছতা কমানো সম্ভব।

মেছতার জন্য কোন ক্রিম ভালো 

মেছতার জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্রিম বাজারে পাওয়া যায়, তবে সঠিক ক্রিম নির্বাচন করতে হলে তার উপাদান ও কার্যকারিতা সম্পর্কে জানা জরুরী। একটি প্রমাণিত এবং জনপ্রিয় ক্রিম হল Hydroquinone cream (হাইড্রোকুইনোন ক্রিম)। এটি মেছতার চিকিৎসার ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় কারণ এতে Hydroquinone নামক উপাদান থাকে যা ত্বকের মেলানিন উৎপাদন কমাতে সাহায্য করে। এই ক্রিমটি ত্বকের দাগ কমানোর পাশাপাশি ত্বক উজ্জ্বল করে। এছাড়া "kojic Acid cream" একটি ভালো বিকল্প হতে পারে , যা ত্বকের মেলানিন উৎপাদন কমিয়ে মেছতার দাগ হালকা করে।

এছাড়া 'Retinold Cream' বিশেষত 'Tretinoin' অন্তর্ভুক্ত ক্রিম, ত্বকের কোষ পুনর্গঠন ত্বরান্বিত করে এবং মেছতার দাগ হালকা করতে সাহায্য করে। এই ক্রিমগুলি সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এবং ত্বকের বিশেষজ্ঞের পরামর্শ প্রয়োগ করলে সেরা ফলাফল পাওয়া যেতে পারে। 

লেখক এর মন্তব্য 

উপরোক্ত উপায় গুলি নিয়মিত অনুসরণ করলে মেছতা চিরতরে দূর করা সম্ভব। তবে ত্বকের প্রকারভেদ এবং মেছতার স্তর অনুযায়ী কিছু ক্ষেত্রে সময় বেশি লাগতে পারে। প্রাকৃতিক এবং কেমিক্যাল ভিত্তিক উপায় ত্বকের যত্ন নেওয়া নিরাপদ এবং কার্যকরী। ত্বকের যত্নে ধৈর্য ধরে উপরোক্ত উপায় গুলি অনুসরণ করুন এবং ফলাফল দেখুন। 

প্রয়োজনে একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত যাতে সঠিক পদ্ধতি বেছে নেওয়া যায়। ত্বকের যত্নে নিয়মিত এই উপায় গুলো অনুসরণ করলে মেছতা দূর হওয়ার সম্ভব এবং তক হবে মসৃণ ও উজ্জ্বল।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

টপ ট্রিক্সস্‌ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। সব কমেন্টস রিভিউ করা হয়, ধন্যবাদ।;

comment url