নিমপাতা ও কাঁচা হলুদ ১০ টি উপকারিতা জেনে নিন

নিমপাতা ও কাঁচা হলুদের উপকারিতা অনেক। নিজেকে সুন্দর ও পরিপাটি করে রাখার জন্য ত্বকের যত্ন নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। সবাই সুন্দর মসৃণ ত্বক পেতে চাই ।আর মসৃণ ত্বকের জন্য নিম পাতা ও কাঁচা হলুদের উপকারিতা অপরিসীম।

নিমপাতা ও কাঁচা হলুদ ১০ টি উপকারিতা জেনে নিন

কেননা এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে ঘরে বসেই তৈরি করা যায়। আর এতে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। আর সেজন্য এটি নিশ্চিন্তে ব্যবহার করা যায়। নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ দুটোই প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদান হিসেবে কাজ করে থাকে । প্রাচীনকাল থেকে ন্যাচারাল এন্টিবায়োটিক হিসেবে কাঁচা হলুদের ব্যবহার হয়ে আসছে আর অন্যদিকে নিম ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে থাকে।

পোস্টের সূচিপত্রঃ

ত্বকের মসৃণতা বজায় রাখতে নিম পাতা ও কাঁচা হলুদের উপকারিতা

প্রকৃতি আমাদের এমন কিছু উপাদান দিয়েছে যা আমাদের প্রত্যেক জীবনের ছোটখাটো সমস্যা সমাধান করে দিতে পারে নিমিশেই। এবং এতে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে না।প্রকৃতি থেকে আমরা যেসব উপাদান পেয়েছি তার মধ্যে অন্যতম প্রধান হচ্ছে নিমপাতা ও কাঁচা হলুদ।

নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ হল প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদান। কাঁচা হলুদ শরীরের ডিটক্স এর কাজ পালন করে এবং নিমপাতা প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। ত্বকের মসৃণতা বজায় রাখতে সহজে ব্যবহার করা যায় এই প্রাকৃতিক ভেষজ নিমপাতা ও কাঁচা হলুদ।

নিমপাতা ত্বকের শক্তিশালী জীবণুনাশক হিসেবে কাজ করে। ত্বকের দাগ দূর করতে নিমপাতার উপকারিতা অপরিসীম। কেননা এটি ত্বকে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। যার ফলে ব্রণ, ঘামাচি , এলার্জির মত সমস্যা গুলো থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। 


রূপচর্চায় কাঁচা হলুদ যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। এন্টি সেপটিক হিসেবে হলুদ যেমন অতুলনীয় কাজ করে তেমনি ত্বকের ব্রণ দূর করতে এবং ত্বকের ক্ষত নিরাময়ে কাঁচা হলুদের ভূমিকা অপরিসীম।

নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ একসাথে ব্যবহার করলে ত্বকের জৈব টক্সিন গুলো দূর হয়ে যায় এবং এটি ত্বকে এন্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। নিমপাতা ও কাঁচা হলুদ বেটে আপনি খুব সহজে বড়ি বানিয়ে নিতে পারেন এবং অনেকদিন সংরক্ষণ করে রাখতে পারবে। ব্রণের দাগ দূর করতে নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ একসাথে বেটে লাগালে কিছুদিনের মধ্যেই ব্রণের দাগ দূর হয়ে যাবে । এবং নিয়মিত এটি ব্যবহারের ফলে ত্বক আরো উজ্জ্বল হবে।

ত্বক উজ্জ্বল করতে নিম পাতা ও কাঁচা হলুদের উপকারিতা

শরীরের ত্বক উজ্জ্বল করতে নিম পাতা ও কাঁচা হলুদের জুড়ি নেই। কাঁচা হলুদ বেটে এর রসের সাথে নিম পাতার রস একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট করে ফেসপ্যাক এর মতো বানিয়ে মুখে লাগালে মুখ উজ্জ্বল হয়।আপনি চাইলে কাঁচা হলুদ ও নিমপাতার সাথে চালের গুড়া ,টক দই , পানি নিতে পারেন ইত্যাদি মিশিয়ে নিতে পারেন।

নিমপাতা ও কাঁচা হলুদ ১০ টি উপকারিতা জেনে নিন

ফেসপ্যাক টি বানানো হয়ে গেলে আপনি মুখ ,গলাসহ ত্বকের বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহার করতে পারেন।ফেসপ্যাকটি ত্বকে লাগানোর পর ১৫-২০ মিনিট রেখে দিয়ে হালকা হাতে ঘষে ফেলুন এবং এই প্যাকটি সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন ব্যবহার করবেন। যার ফলে আপনার শরীরের ত্বক অনেক উজ্জ্বল হবে।

যেভাবে ফেসপ্যাক বানাবেন

ফেসপ্যাক বানানোর উপকরণ হিসেবে ৮ থেকে ১০ টি নিম পাতা ও তিন থেকে চার টুকরো কাঁচা হলুদ নিতে হবে। চাইলে এর সাথে তুলসী পাতা, নিমপাতা, মুলতানি মাটি,চন্দন,লবঙ্গ, কর্পূর মিশিয়ে ভালো করে বেটে নিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করতে পারেন।

চুলের যত্নে নিমপাতা ও কাঁচা হলুদের উপকারিতা

চুল পড়ার সমস্যা নারী ও পুরুষের উভয়েরই। সেক্ষেত্রে চুলের যথাযথ যত্ন নেওয়া আমাদের একান্ত প্রয়োজন। অনেকের মাথার ত্বকে চুলকানি হয় এবং খুশকির পরিমাণ অনেক থাকে।মাথায় খুশকির সমস্যা দূর করতে নিমপাতার রস অন্যান্য যেকোনো ওষুধের চেয়ে বেশি কার্যকর।নিমপাতার রসে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক উপাদান রয়েছে যা ফুলের খুশকির চিকিৎসার জন্য অনেক কার্যকরী। এছাড়া নিম পাতার রস মাথায় ব্যবহার ফলে উকুনের সমস্যা দূর হয়।

নিম পাতার রসের পাশাপাশি চুলের খুশকি দূর করতে এবং মাথার ত্বকের বিভিন্ন চুলকালে সমস্যা দূর করতে হলুদ ও কার্যকরী ভূমিকা রাখে। হলুদের থাকা এন্টিসেপটিক এবং প্রদাহবিরোধী গুণগুলো খুশকি দূর করতে এবং মাথা ত্বকের সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়াও চুল বৃদ্ধিতে এবং চুলের ক্ষত মেরামত করতে হলুদের উপকারিতা অনেক।

যেভাবে নিমপাতার রস বানাবেন

নিমপাতার রস বানানোর জন্য উপকরণ হিসেবে ১৫-২০টি নিম পাতা নিয়ে ৪-৫ কাপ হালকা গরম পানিতে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিতে হবে। নিম পাতার পানিটা সবুজবর্ণ ধারণ না হওয়া পর্যন্ত ফোটাতে হবে। এরপর পানি ঠান্ডা করতে দিতে হবে। আপনার চুল শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করে নেয়ার পর এই নিমপাতার রসটি ব্যবহার করতে হবে। সপ্তাহে ২-৩ বার এই নিম পাতার রস ব্যবহার করলে খুশকি নিমিষে দূর হবে।

নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ দিয়ে রোদে পোড়া দাগ দূর করুন

হলুদ নিজেই আলাদাভাবে অনেক শক্তিশালী উপাদান।তাই আপনাকে অবশ্যই হলুদের সাথে নিম পাতার রস মিশিয়ে নিতে হবে। না হয় নিমপাতা রস ও কাঁচা হলুদ বেটে পেস্ট তৈরি করে নিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যবহার করলে ত্বকের রোদে পোড়া দাগ দূর হয় নিমিষে।

নিমপাতা ও কাঁচা হলুদ ১০ টি উপকারিতা জেনে নিন

কাঁচা হলুদ বাটা,বেসন,চালের গুড়া ও টক দই এর সাথে পানি মিশিয়ে মুখে গলায় ও পিঠে লাগালে রোদে পোড়া দাগ দূর হয় নিমিষে।

নিমপাতা ও কাঁচা হলুদের পেস্ট তৈরি করবেন যেভাবে

নিম পাতা ও কাঁচা হলুদের পেস্ট তৈরি করার জন্য যেসব উপকরণ লাগবে তা হল মসুর ডাল বাটা, কাঁচা হলুদ বাটা, মধু , কাঁচা দুধ , নিমপাতার গুড়ো।  এসব উপকরণ একসঙ্গে করে ব্লেন্ডিং করে অথবা পাটায় বেটে ২৫-৩০ মিনিট রোদে শুকিয়ে নিয়ে ভালোভাবে সংরক্ষণ করুন এবং ঠান্ডা জায়গায় রাখুন। এবং সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন এই পেজটি ব্যবহার করুন।

চোখের নিচে কালো দাগ দূর করতে নিম পাতা ও কাঁচা হলুদের উপকারিতা

চোখ আমাদের সৌন্দর্যের প্রতিক। কিন্তু সেই চোখের নিচে কালো দাগ হলে তা শুধুমাত্র চোখের জন্য খারাপ নয় বরং কালো ছাপ দীর্ঘস্থায়ী হলে ত্বকের জন্যেও ক্ষতিকর।চোখের নিচে এ কালো দাগ দূর করতে কাঁচা হলুদ ও নিমপাতার তৈরি ফেসপ্যাকের কার্যকারিতা অনেক।


যেহেতু ত্বকের যত্নে কাঁচা হলুদ সবসময় উপকারী।কাঁচা হলুদের সাথে নিমপাতার রসের ফেসপ্যাক বানিয়ে সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন ব্যবহার করলে খুব সহজে চোখের নিচে কালো দাগ দূর হয়ে যায়।

পাঁচড়া ও চুলকানি নিরাময়ে নিম পাতা ও কাঁচা হলুদের উপকারিতা

পাঁচড়া ও চুলকানি নিরাময়ে নিম পাতা ও কাঁচা হলুদের উপকারিতা অপরিসীম। নিম পাতার রসের সাথে সামান্য কাঁচা হলুদ পিষে নিয়ে আক্রান্ত স্থানে প্রলেপ আকারে লাগিয়ে পাঁচ সাত মিনিট রেখে ব্যবহার করলে পাঁচড়া ও চুলকানি দূর হয় নিমিষে।

গোসলের পানির সাথে নিমপাতা সিদ্ধ পানি মিশিয়ে গোসল করলে যাদের পাঁচড়া ও চুলকানি আছে তা দূর হয়ে যাবে।

স্কিন টোনার হিসেবে কাজ করে নিমপাতা ও কাঁচা হলুদ

নিম পাতা ও পাতা ওলু ত্বকের টোনার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে তুলার নরম বল অথবা পরিষ্কার তেনা নিমপাতা সিদ্ধ পানিতে ভিজিয়ে মুখে লাগাতে হবে। এতে করে ত্বকে থাকা ব্রণ, ক্ষত চিহ্ন, মুখের কালো দাগ নিমিষেই দূর হবে।এছাড়াও কাঁচা হলুদ বাটার রস ব্যবহার করতে পারে।

এলার্জির সমস্যার সমাধানে নিমপাতা ও কাঁচা হলুদ

এলার্জির সমস্যা সমাধানের নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ কার্যকরী ভূমিকা রাখে।যাদের এলার্জি সমস্যা আছে তারা নিমপাতা সিদ্ধ হালকা গরম পানির সাথে কাঁচা হলুদ বাটার রস মিশিয়ে ত্বকের ব্যাবহার করলে এলার্জির সমস্যা খুব সহজেই সমাধান হয়ে যাবে।

এছাড়া নিমপাতা সিদ্ধ পানি সাথে কাঁচা হলুদ বাটার রস গোসলের পানির সাথে মিশিয়ে গোসল করতে পারেন সমস্যার থাকলে।

ব্রণের চিকিৎসায় নিম পাতা ও কাঁচা হলুদের উপকারিতা

যাদের মুখে ব্রণ আছে তারা নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ বাটা ব্যবহার করতে পারেন।মুখে অতিরিক্ত ব্রণ থাকাটা খারাপ দেখায়।নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ ব্রণের যত রকম ভাইরাস আছে সব দূর করে মুখ পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে।

নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ একসাথে মিশ্রণ করে ত্বকে ভালোভাবে লাগিয়ে নিয়ে হালকা মেসেজ করতে হবে। এভাবে .১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। যার ফলে ত্বক থেকে ব্যাকটেরিয়া দূর হবে এবং ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর হবে।এবং
সব ত্বকে থাকা সমস্ত ব্রণ দূর হয়ে যাবে।

চেহারায় বয়সের ছাপ দূর করে নিমপাতার রস ও কাঁচা হলুদ

রূপচর্চায় নিমপাতার রস ও কাঁচা হলুদ বাটা এক অতুলনীয় প্রাকৃতিক উপাদান।নিম পাতার সাথে কাঁচা হলুদ পেস্ট করে লাগালে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। নিমপাতা, কাঁচা হলু্‌ গোলাপ জল  ও দুধে একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে ব্যবহার করলে চেহারা থেকে বয়সে চাপ দূর হয়।

এছাড়া তুলসী পাতা, নিমপাতা্মু‌লতানি মাটি ,চন্দন, লবঙ্গ ,কাঁচা হলুদ বাটা, ও সামান্য কর্পূর মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে সেটি মুখে দিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রাখার পরে মুখ ধুয়ে নিলে ত্বকের যত কালো দাগ আছে তা দূর হয়ে চেহারায় উজ্জ্বলতা বাড়ায়।যার ফলে চেহারায় বয়সের ছাপ বোঝা যায় না।

শুধুমাত্র কাঁচা হলুদ বাটা এড়িয়ে চলুন

যেহেতু হলুদ নিজে আলাদাভাবে শক্তিশালী উপাদান শুধুমাত্র হলুদ ব্যবহার করা ঠিক নয়। যদি শুধুমাত্র কাঁচা হলুদ ব্যবহার করতে চান তাহলে কাঁচা হলুদের রস বের করে কুসুম কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে ব্যবহার করুন। শুধু কাঁচা হলুদ ব্যবহার করলে হলুদে থাকা তেল ত্বকে স্বাভাবিকভাবে মিশতে সময় নেওয়াতে অ্যালার্জি বেড়ে যাওয়া সম্ভাবনা থাকে।

শেষ কথা

শেষ কথা হিসেবে এ কথা বলা যায় যে প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে নিমপাতা ও কাঁচা হলুদ স্রষ্টার দেওয়া নেয়ামতের মধ্যে অন্যতম।কেননা উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা দেখলাম নিমপাতা ও কাঁচা হলুদ আমাদের ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল রাখতে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়াও  চুলের যত্নে কতটা ভূমিকা রাখছে। 

নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ বাটা খেয়েও অনেক উপকার পাওয়া যায়। নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ বাটার বড়ি খেয়ে বার্ধক্য জনিত সমস্যা প্রতিহত করা যায়। ফুসকুড়ি সমস্যা প্রতিহত করা যায়। এছাড়া নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ যদি খাওয়া যায় তাহলে এটি আমাদের শরীরের পরিপাকতন্ত্রকে সকল রাখতে সহায়তা করে।







এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

টপ ট্রিক্সস্‌ আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। সব কমেন্টস রিভিউ করা হয়, ধন্যবাদ।;

comment url